বর্তমান সময়ে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল যে কিনা সোশ্যাল মিডিয়া, অর্থাৎ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম... ইউজ করেন না। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই অন্যের সঙ্গে কানেক্ট থাকতে পারি এবং এর থেকে আমরা ইন্টারট্রেইনমেন্ট পাই। কিন্তু আপনি কি জানেন যে কি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের ব্রেনের ইফেক্ট ফেলছে?
হ্যাঁ, অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ার পজেটিভ নেগেটিভ দুই দিকই রয়েছে। কিন্তু আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো যে কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল অ্যাডিকশন আমাদের ব্রেইনে ইফেক্ট ফেলছে। কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মোস্ট ভ্যালুয়েবল স্কিলটা নষ্ট করে দিচ্ছে।
আমাদের ব্রেইনে ডোপামিন নামের একটি অর্গানিক ক্যামিকেল থাকে।যা নিউরোট্রান্সমিটারের মত কাজ করে। এই ডোপামিন আমাদের কোন কাজ করার জন্য মোটিভেট করে। আমরা যাই করি না কেন তার পেছনে এই ডোপামিন হরমন কাজ করে। ছোটবেলায় আপনি যখন কোন মেলাতে যেতেন তখন কোন খেলনা বেলুন দেখে আপনি খুব এক্সাইটেড হয়ে পরতেন এবং সেটা পাওয়ার জন্য আপনি খুব জেদ করতেন।
কারণ সেই খেলনা বেলুন টা দেখার পর আপনার ডোপামিন লেভেল অনেকটাই হাই হয়ে যেত। ধরে নেওয়া যাবে যাক এই বয়সে আপনার এভারেজ ডোপামিন লেভেল ছিল ৫০ আর এবার সে বেলুনটা বা খেলনাটা দেখার পর আপনার ডোপামিন লেভেল বেড়ে হয়ে যেত ৭৫। তাই যতক্ষন না আপনি সেই বেলুন বা খেলনাটা হাতে পেতেন, ততক্ষণ আপনি সেটার জন্য জেদ ধরে থাকতেন। আর যখন সেটা আপনি হাতে পেয়ে যেতেন তখন আপনার ডোপামিন লেভেল আবার নরমাল হয়ে যেত। এখন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর আপনার ডোপামিন লেভেল ৫০ থেকে ৫০ হয়ে গেছে। তাই এখন আপনি মেলাতে গেলে বেলুন বা খেলনা দেখে এক্সাইটেড হয়ে যান না। বরং মেলাতে আসা মেয়েদের দেখে এক্সাইটেড হন 😜
কারণ খেলনা বা বেলুন আপনার ডোপামিন লেভেলকে ১০০ এর উপর নিয়ে যেতে পারে না। আর এই কারণেই সেটা দেখে এখন আপনার এক্সাইটেড হয়ে যান না। আর ঠিক এরকমই নিয়মিত নেশা করে ড্রিঙ্কস করে তাদের ডোপামিন লেভেল ৪০০ পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। আর এভাবে নেশা করতে করতে তাদের স্বাভাবিক ডোপামিন লেভেল ১০০ থেকে বেরে ২০০ হয়ে যায়। আর এই কারণে সাধারণ জীবন যাপন করে তখন আর তারা আনন্দ পায় না।
কারণ দৈনন্দিন জীবনে এমন কোন কাজ নেই যেটা আমাদের ডোপামিন লেভেলকে ২০০ পার করিয়ে দেয়। আর সোশ্যাল মিডিয়া ও আমাদের ব্রেইনে এভাবে ইফেক্ট করে। হ্যাঁ, অভিয়াসলি সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের ব্রেইনে ডোপামিন লেভেলকে ৪০০ অবধি নিয়ে যায়না ঠিকই। কিন্তু তার অনেকটাই কাছাকাছি নিয়ে যায়। যখনই আপনার মোবাইলে কোন নোটিফিকেশন আসে তখনই আপনার ডোপামিন লেভেল ইন্সট্যান্টলি বেড়ে যায়।
যার কারণে ওই মুহূর্তে নোটিফিকেশন চেক না করে আপনি স্থির থাকতে পারেন না। আর এই ঘটনা আপনার সঙ্গে প্রত্যেকদিন ঘটতে থাকায় আপনার ডোপামিন লেভেল আপ ডাউন করতে করতে নরমালের থেকে অনেকটা বেড়ে যায়। আর তখন আপনি কোন কিছুতে ইন্টারেস্ট পান না। আপনি বাড়ির কাজে ইন্টারেস্ট পান না। পড়াশোনাতেও ইন্টারেস্ট পান না।এমনকি খেলাধুলাতেও ইন্টারেস্ট পান না।
সোশ্যাল মিডিয়া জন্য আমরা কোন কিছুতে ফোকাস করতে পারি না। অল্প কিছুক্ষণ করার পরেই আমরা কোন কাজে ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলি। আর এই কারণে বর্তমানে প্রত্যেকেই তার মুখে এই কথাটা শোনা যায় যে ধুর ভালো লাগছে না কি যে করি কিছুই ভালো লাগে না। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া মেইনলি আমাদের অ্যাটেনশন এর উপরে ইস্টেমলি ইফেক্ট ফেলছে।
আমাদের কন্সেন্ট্রেশন পাওয়ার কে নষ্ট করে দিচ্ছে। এছাড়া সাইন্টিফিক রিসার্সে দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মেমোরি পাওয়ার বা স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়। আমরা যখন বই পড়ি বা নতুন কিছু শিখি। তখন টেম্পোরারি ভাবে আমাদের শর্ট টাইম মেমোরি তে গিয়ে সেগুলোতে সেভ হয় অ্যান্ড যখন আমরা রেস্ট করি বা ঘুমায় তখন সেই ডেটা শর্টটার্ম মেমোরি থেকে ট্রান্সফার হয়ে লংটাইম মেমোরিতে সেভ হয় আর এভাবেই আমরা কোন কিছু মনে রাখি।
কিন্তু যখনই আমরা নতুন কিছু শেখার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা বারবার ডিসকানেক্ট হয়। তখন আমাদের শর্টটার্ম মেমোরিতে সেই ইম্পর্টেন্ট ডেটার সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার ইনফরমেশন গুলো জমা হতে থাকে। এভাবে দু’রকম ইনফরমেশন মিশে যাওয়ার ফলে অনেক টাইম পড়াশোনা করার পরেও কোন কিছুই মনে রাখতে পারি না।
যার কারণে প্রচুর পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিলেও স্টুডেন্টরা কম নাম্বার পাই। তো এবার হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে সলিউশন টা আসলে কি...!
এর জন্য আমাদেরকে এভারেজ ডোপামিন লেভেল নরমালি ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলেই আমরা আবার আগের মতো করে দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মে ইন্টারেস্ট শুরু করব। আর ভালো লাগছে না, কোন কিছুই করতে ইচ্ছা করছে না... ব্লা ব্লা ব্লা। এসব থেকে মুক্তি পাব।
এর জন্য সেরা একটি উপায় হলো আপনার ফোনের নোটিফিকেশন সেটিং এ গিয়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার... প্রভিতি সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন গুলো বন্ধ করে দিন। নিতান্ত প্রয়োজনীয় না হলে সেগুলো চালু রাখবেন না। কারণ ম্যাক্সিমাম টাইম এমনই হয় যে আপনি একটা নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকে কাটিয়ে দিচ্ছেন বা কারো সঙ্গে গল্প করতে লেগে গেছেন।
তাই প্রথমত, সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়াতে নোটিফিকেশন অফ করতে হবে। একটা নির্দিষ্ট টাইম সিলেক্ট করুন। যখন আপনি জমে থাকা সমস্ত নোটিফিকেশন বা পেজ গুলোকে চেক করবেন। আর প্রত্যেকদিন ঐটুকু টাইমে অ্যাক্টিভলি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্র্যাকটিস করতে থাকবেন। যার ফলে অলটাইম সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের অ্যাডিকশন আপনার কম হতে শুরু করবে।
দ্বিতীয়ত, যখন আপনি কোন কাজ বা পড়াশোনা করবেন তখন আপনার ফোন সাইলেন্ট মোড টা অন করে।আপনার থেকে দূরে কোথাও রাখতে হবে। এভাবেই প্রথম ২ থেকে ৪ দিন হয়তো আপনার একটু অসুবিধা হবে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি এটা আপনার নতুন হ্যাবিটে পরিণত হবে।
এবং তৃতীয়ত, আপনাকে টাইম ম্যানেজ করা শিখতে হবে। কারণ টাইম ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে আপনি নিজেকে সঠিকভাবে ইউটিলাইজ করতে পারবেন। টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আমাদের একটি লেখা আছে। সেটি পড়ে দেখতে পারেন।